পরিবারের সঙ্গে কাটানো ঈদের কথা মনে পড়ে সেলিমদের

Published: 14 Jul 2022 View: 808

পরিবারের সঙ্গে কাটানো ঈদের কথা মনে পড়ে সেলিমদের || সামছুর রহমান ঢাকা ||প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২২, ২০: ৪৫

মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রমে বিশ্রাম নিচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা নীল রঙের নতুন ফতুয়া আর ভাঁজভাঙা নতুন লুঙ্গি পরে বিছানায় বসে ছিলেন মো. সেলিম। উদাস দৃষ্টিতে একদিকে তাকিয়ে আছেন। ঈদ কেমন কাটল জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘আগে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতাম৷ গরু কিনতাম। এখন আর সেই ঈদ নাই।





মো. সেলিমের সঙ্গে কথা হচ্ছিল রাজধানীর মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রমে অভিভাবকহীন প্রবীণদের এই আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন সেলিমের মতো আরও ১৩৫ জন প্রবীণ ব্যক্তি। যাঁদের ঈদ, পূজা, পার্বণ—সবই এখন এই বৃদ্ধাশ্রমের বদ্ধ ঘরেই কাটে।

চট্টগ্রামের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন ৭২ বছর বয়সী মো. সেলিম। তাঁর দুই মেয়ে চট্টগ্রামে থাকেন। দুজনই চাকরি করেন। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সেলিম এই বৃদ্ধাশ্রমে থাকলেও মেয়েরা খোঁজ নেন না৷ সেলিম বললেন, ‘মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। আলাদা সংসার হয়েছে। নিজেরা চাকরি করে। ঈদেও একবার দেখতে আসেনি।’

সেলিমদের পাশের কক্ষটি নারীদের৷ সেখানে পাঁচজন নারী শুয়ে-বসে ছিলেন। তাঁদের একজন নুরজাহান বেগম। তাঁর বাড়িও চট্টগ্রামে। স্বামী ও এক মেয়েকে নিয়ে ছিল নুরজাহানের সংসার৷ স্বামী ও মেয়ে মারা যাওয়ার পর একা হয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটানোর সময়ের কথা মনে করে নুরজাহান বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার কথা মনে পড়লে আফসোস হয়। কত কী আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হতো। সেই আনন্দ এখন আর নেই।’

এই প্রবীণদের একসময় নিজের সংসার ছিল। এখনো অনেকের ছেলেমেয়ে, নাতি–নাতনি আছে। কিন্তু সেই সংসারে তাঁদের ঠাঁই হয়নি। কেউ পড়েছিলেন রাজধানীর কোনো পথের ধারে, কাউকে আবার ছেলেমেয়েরাই এখানে দিয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ নিজেই যোগাযোগ করে চলে এসেছেন। এখানে আসার পর ছেলেমেয়ের আর সময় হয়নি খোঁজ নেওয়ার।

সাদিয়া বেগমের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। স্বামী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে৷ ছেলেমেয়ে কারও সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই সাদিয়ার৷ তিনি বলেন, অনেক বছর ছেলেমেয়েকে দেখি না। তাঁরাও খোঁজ নেন না। ঈদের দিন এখন আর বিশেষ কিছু না৷

এই প্রবীণদের সবার জীবনেই আছে একটি করে গল্প, তাঁরা তা বলতে চান না। এখন অনেকেই আর চলাফেরা করতে পারেন না। বিছানাতেই প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্ম করতে হয়। বৃদ্ধাশ্রমের কর্তব্যরত ব্যক্তিদের ওপরেই তাঁরা পুরোপুরি নির্ভরশীল।

চার বছরের বেশি সময় ধরে এখানে আছেন মোশতাক আহমেদ চৌধুরী। একসময় একটা মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এখন পরিবার থেকে আলাদা। মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘ঈদের সময়গুলো অনেক মনে পড়ে। পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে আর ঈদকে ঈদ মনে হয় না।’

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেওয়া অলাভজনক এবং একক ব্যক্তি উদ্যোগে গঠিত এ আশ্রয়কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী ও তত্ত্বাবধানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মিল্টন সমাদ্দার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী, এই মা–বাবাদের নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছি। তবে পরিবারের সঙ্গে না থাকায় তারা ঈদে আনন্দ পান না। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত সামর্থ্যের সঙ্গে বিভিন্নজনের সহায়তায় চলছে প্রতিষ্ঠানটি।’

একজন প্রবীণ সদস্যকে নিয়ে মিল্টন সমাদ্দার অসহায় প্রবীণদের আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। এখন পাইকপাড়ায় অল্প দূরত্বে একাধিক বাড়িতে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের ১৩৫ জন প্রবীণ ব্যক্তি এবং ৩০ জন শিশু থাকছেন। আজ ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে এই নিবাসের সদস্যদের। দুপুরে দেওয়া হয়েছে বিশেষ খাবার।


Watch Videos

পাগলিটা মা হয়েছে, বাবা হয়নি কেউ!

25 Feb | Watch Video

দেশের বৃহত্তম আশ্রম এখন হিমশিমে!

25 Feb | Watch Video

তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম আশ্রম! এগিয়ে আসুন সবাই

25 Feb | Watch Video

তৈরি হচ্ছে ৭০০ মানুষের আশ্রয় কেন্দ্র! || Child & Old Age Care.

25 Feb | Watch Video

৭০ হাজার মানুষেরে পাশে দাঁড়িয়েছে Child & Old Age Care.

25 Feb | Watch Video

Most Read
Watch Featured Videos

© Child And Old Age Care 2015-2025
Creating Document, Do not close this window...