নিজ খরচে বৃদ্ধাশ্রম চালাচ্ছেন মিল্টন সমাদার

Published: 23 Jun 2019 View: 5,717

কল্যাণপুর বৃদ্ধাশ্রম ঘুরে এসেঃ জীবনটা মোর সোনার খাঁচায় রইল না’ বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ছন্দের সঙ্গে মিলে যায় দেশের বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর জীবনে। আজকের এই বৃদ্ধ ব্যক্তিটি কোন একদিন কোন পরিবারের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন। সময়ের বিবর্তনে তারা আজ পরিবারের কাছে বোঝা। মুখে তাদের অনিচ্ছাকৃত হাসি লেগে থাকলেও অতীতের স্মৃতি মনে পড়লে বুক ফেঁটে যায় হাউমাউ কান্নায়। বৃদ্ধাশ্রম গুলো স্ব-চোখে না দেখলে বুঝায় যাবে না কিভাবে কাটে বৃদ্ধাশ্রমের বাবা-মা গুলোর সময়। যাদের অবসর জীবনে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনীদের নিয়ে সময় কাটানোর কথা তারা এখন কর্মহীন জীবন নিয়ে বসে বসে জীবনের ইতির অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।



আজ তুলে ধরবো দেশের অন্যান্য বৃদ্ধাশ্রমগুলোর মতো রাজধানীর কল্যাণপুরে এ অবস্থিত ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার। সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই ব্যক্তিগত টাকায় পরিচালনা করা হয় এই বৃদ্ধাশ্রমটি। 
এই বৃদ্ধাশ্রমটি প্রতিষ্ঠা হয় ২০১৪ সালে। বর্তমানে এই বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন মোট ৫৪ জন। তাদের মধ্যে বাবা-২৩, মা-৩০ ও শিশু ময়না। ময়নার বর্তমান বয়স ৩ বছর। এদের মধ্যে বাক প্রতিবন্ধি ৪ জন, প্যারালাইসিস ১৫ জন ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি ৩ জন।
আর তাদের সেবায় কর্মরত রয়েছেন ১৪ জন পুরুষ ও মহিলা সেবাকর্মী। তাদের মধ্যে ছেলে-১০ ও মেয়ে-৪ জন। চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছেন একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার। ডাক্তার শাহরিয়ার নাজিম পার্থ (এম.বি.বি.এস) তিনি সপ্তাহে ২ দিন এই বৃদ্ধ বাবা-মা দের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। রান্নার কাজে রয়েছেন ২ জন রাঁধুনী। 



বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক মিল্টন সমাদার এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি এই বৃদ্ধাশ্রমটি পরিচালনা করে আসছেন। তিনি আরও জানান, আমার একটি নার্সিং হোম সার্ভিস আছে সে হোম সার্ভিস থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা উপার্জন হয়। এ উপর্জনের টাকা থেকে আমি প্রথমে একজন অসহায় ব্যক্তিকে সাহায্যে করা শুরু করি। পরবর্তীতে সদস্য সংখ্যা বেড়ে গেলে বৃদ্ধাশ্রমের জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়ে অসহায় বৃদ্ধ বাবা-মা সংগ্রহ করা শুরু করি। বর্তমানে বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন ৫৩ জন আর একটা ছোট বাচ্চা। মানবিক কারণেই বৃদ্ধাশ্রমটি পরিচালনা করেন বলেও জানান তিনি। 
পরে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন আশ্রমের জৈষ্ঠ বৃদ্ধ চট্রগ্রামের সেলিম (৭৮)। তিনি আশ্রমে রয়েছেন ২ মাস যাবত। তিনি পেশায় প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক ছিলেন। উনার দুই মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে বর্তমানে তার স্থান হয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রমে। 
ফরিদপুরের বৃদ্ধ মা সেলিমা আক্তার (৭০)। তিনি এখানে দুই বছর যাবত আছেন। উনার কাছে জানতে চাইলে উনি জানান, আমার এখানে কোন সমস্যা নাই। প্রতিদিন সময় মত খাবার পাই ও চিকিৎসা সেবা পাই। 
মাদারীপুর জেলার বৃদ্ধ বাবা মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী টিপু (৬৯) তিনি জানান, আমার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই বর্তমানে একা আমি। এখানে দুই বছর যাবত আছি। খাওয়া থাকা চিকিৎসা নিয়ে কোন সমস্যা নাই। 
খুলনা জেলার বৃদ্ধ বাবা আব্দুল মতিন তিনি জানান, আমি এখানে ১৬ মাস যাবত আছি। আমার এক ছেলে ছিল ২০১২ সালে মারা গেছে। আর দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছি খুলনায়। আর আমার স্ত্রী ২০০৭ সালে মারা গেছে। আমি ঢাকার নবাবপুরে একটা কোম্পানিতে চাকুরী করতাম। এখানে তিন বেলা খাওয়া পাই, থাকা ও চিকিৎসা সেবা পাই। কোন প্রকার সমস্যা হয় না এখানে।
বৃদ্ধ বাবা-মা দের কথা কষ্টের কথা শুনার পরে চোখের পানি ধরে রাখতে পারবেন না। আরও অনেক মা-বাবা এই বৃদ্ধাশ্রমে আছেন যারা কিনা পরিবারের পরিচয় গোপন রাখেন। উনারা বলেন আমরা পরিচয় দিলে আমাদের ছেলে-মেয়ে দের মান সম্মানের হানি হবে। তবে এই বৃদ্ধাশ্রমে উনারা সব হারিয়েও বর্তমানে অনেক ভাল আছেন। কারন পরিচালক সহ অন্যান্য সকল সেবাকর্মীদের ছেলে ও মেয়ে সেবাকর্মীদের মেয়ে বলে ডাকেন উনারা। সব মিলিয়ে নতুন পরিবার ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক ভাল আছেন বলে জানান উনারা। 



বর্তমানে রমজান মাস চলছে অনেকে রোজা রেখেছেন। সময় মত ইফতার ও সেহেরী খেতে পারেন বলে জানান বৃদ্ধাশ্রমের রোজাদার বাবা-মায়েরা। বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে টিভি ও ফ্যান।
প্রতিদিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি চাকুরীজীবি পরিবারের সদস্যরা খাবার দিয়ে যান এই বৃদ্ধাশ্রমে।
বৃদ্ধাশ্রম চেয়ারম্যান ও পরিচালক মিল্টন সমাদার আরও জানান, বর্তমানে আমি ২৫ জন স্যার ও ম্যাডামের সাহায্যে পাই। উনারা প্রতিমাসে এখানে টাকা দিয়ে রশিদ নিয়ে যায়। ১৫ মে দুপুরে একজন লেখিকা ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় থেকে এসে ১৫ হাজার টাকা দান করেছেন। কিছুক্ষন পরে লালমাটিয়া থেকে আসা অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক ও তার পরিবার ৩৭ হাজার টাকা দান করেছেন বলে জানান তিনি। প্রতিমাসে খাবারের অভাব হয়না এই বৃদ্ধাশ্রমে। অনেকে প্রতি সপ্তাহে আবার অনেকে প্রতিদিন খাবার দিয়ে যায় এই বৃদ্ধাশ্রমে। 
বৃদ্ধাশ্রমের বর্তমান ঠিকানা ঃ চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার। বাসা-৪৬২, রোড নং-০৮, ব্লক-ডি, দক্ষিন পাইকপাড়া, মিরপুর, ঢাকা- ১২০৭। মোবাইল- +৮৮০১৬২০৫৫৫২২২, ০২-৫৮০৫০৬৮০


Watch Videos

পাগলিটা মা হয়েছে, বাবা হয়নি কেউ!

25 Feb | Watch Video

দেশের বৃহত্তম আশ্রম এখন হিমশিমে!

25 Feb | Watch Video

তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম আশ্রম! এগিয়ে আসুন সবাই

25 Feb | Watch Video

তৈরি হচ্ছে ৭০০ মানুষের আশ্রয় কেন্দ্র! || Child & Old Age Care.

25 Feb | Watch Video

৭০ হাজার মানুষেরে পাশে দাঁড়িয়েছে Child & Old Age Care.

25 Feb | Watch Video

Most Read
Watch Featured Videos

© Child And Old Age Care 2015-2025
Creating Document, Do not close this window...