posted: 23 Jun 2019 | By:
সময়টা রমজানের শেষ দিন। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ইফতারের আগ মুহূর্তে বাসায় যাওয়ার তাড়ায় সবাই ব্যস্ত। টাইগারপাস মোড়ের এক পাশের রাস্তায় চালের বস্তা মুড়িয়ে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে আছেন এক বৃদ্ধ। ব্যস্ত সময়ে তার দিকে ফিরে তাকানোর ফুরসত নেই কারো। অন্যদের মতো সেদিন রাস্তা অতিক্রম করছিলেন সানজিদা আফরোজ। তার মনে মানবতা বেঁচে ছিল। তাইতো কয়েকজন পথচারীর সহযোগিতায় লোকটিকে যাত্রী ছাউনির তলায় নিয়ে এসে সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তার স্ট্যাটাসে সাড়া দিয়ে ইফতারের কিছুক্ষণ আগেই কামাল হোসেন নামের আরেক মানবতাবাদী ছুটে যান ঘটনাস্থলেই। পরে আরো কয়েকজনের সহায়তায় সেলুনে নিয়ে গিয়ে বৃদ্ধের চুল-দাড়ি কেটে তাকে ভর্তি করানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তারপর দিন ঈদের দিন সকালবেলা তারাই আবার জামা ও খাবারের পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
নিজেদের ঈদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে পালাবদল করে দায়িত্ব পালন করে যায় নাইম, মঞ্জু, নাছরীন, সালমা, মিনহাজের মতো কিছু তরুণ-তরুণী। যাদের কারণে সেই বৃদ্ধের চিকিৎসা ও দেখভালের কমতি হয়নি এতটুকু। এর ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে ফেসবুকের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা সংগ্রহের কাজ। যা দিয়ে বৃদ্ধের চিকিৎসার খরচ চলতে থাকে। মোটামুটি সুস্থ হওয়ার পর পরিবার-পরিজনের কথা জিজ্ঞেস করতেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে তিনি অঝোরে কেঁদে ফেলেন বাচ্চাদের মতো। বৃদ্ধ মানুষটির নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি তার নাম ছিদ্দিক রহমান ও কিশোরগঞ্জ জেলার একটি মসজিদের পাশেই থাকতেন বলে জানান। তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে নিতে চাইলে তিনি বারবার কেঁদে ওঠেন। সব ধরনের কথার উত্তর দিলেও পরিবারের কথা উঠলেই তিনি চুপ মেরে যান। যেন পরিবার তাকে আলাদা করে দিয়েছে। হাসপাতালে সঙ্গে থাকা সবাইকে প্রায়ই পরামর্শ দিচ্ছেন তারা কেউ যেন তাদের মা-বাবাকে তাদের কাছ থেকে আলাদা না করে।
মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এই বৃদ্ধকে কোমরে আঘাত থাকা ও শারীরিক অক্ষমতার কারণে চট্টগ্রামে অবস্থিত বৃদ্ধাশ্রম তাকে ভর্তি করাতে অপরাগতা প্রকাশ করে। তাও আশার আলো নেভেনি। ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার বৃদ্ধাশ্রম বৃদ্ধটির যাবতীয় দায়ভার নিতে রাজি হয়। কিছু মহৎ ও উদারপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবী তরুণের সহায়তায় টানা ৪ দিন পর গতকাল বৃদ্ধ লোকটিকে বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি করিয়ে দেন ওই তরুণেরা। মানবতাবাদী এই তারুণ্যের জন্যই বৃদ্ধ লোকটি অপেক্ষাকৃত সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ পেল।
পূর্বকোণ/ রাশেদ