বৃদ্ধ খুঁজে বেড়ানোই যার কাজ

Published: 16 Jun 2019 View: 2,009

 



৩২ বছরের তরুণ মিল্টন সমাদ্দার। বৃদ্ধ খুঁজে বেড়ানোই যার নেশা। বৃদ্ধদের খোঁজে কখনো ঘুরে বেড়ান চট্টগ্রাম, বরিশাল নারায়ণগঞ্জ কখনোবা খুলনা। সেখানে ঘুরে ঘুরে রাস্তা থেকে অসুস্থ অসহায় বৃদ্ধদের পরম মমতায় বুকে তুলে নেন তিনি।

অাধুনিকতার যুগে যেখানে সন্তানরা ভুলতে বসেছে তাদের বাবা-মাকে। অস্বীকার করতে চায় তাদের শেকড়কে, সেখানে মানবতার এক অন্যরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই তরুণ।

নিজ খরচে রাস্তা থেকে নিয়ে আসা বৃদ্ধদের দেখাশুনাসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন মিল্টন ও তার স্ত্রী মিঠু হালদার। রাস্তায় রোদ-বৃষ্টি, ধুলা-ময়লা, গুরুতর আহত, শরীরে ক্ষত ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকা, মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধদের নিয়ে এসে তাদের সেবা করেন মিল্টন। এমনকি মৃত্যৃর পর তাদের দাফন-কাফনের দায়িত্বও পালন করেন মিল্টন। 

বরিশালের উজিরপুরের ছেলে মিল্টন। তার এ কর্মকাণ্ডের শুরু ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে রাস্তার পাশে রোগ-শোকে জরাজীর্ণ এক বৃদ্ধাকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন তার স্মৃতি হারিয়েছে। দেরি না করে দ্রুত তাকে বাসায় নিয়ে যান। বৃদ্ধা সেখানে মিল্টনের পরিবারের সদস্যের মতই থাকতে থাকে।

এর পরই মিল্টনের মাথায় চেপে বসে মানবতার কল্যাণের এই নেশা। শুরু করেন বৃদ্ধদের খোঁজ। সন্তান পরিত্যাক্ত, অসুস্থ, স্মৃতিভ্রষ্ট, রোগাক্রান্ত বয়স্ক মানুষ দেখলেই নিয়ে আসেন তিনি। ভাড়া নেন তাদের জন্য একটি আলাদা টিনশেড ঘর।

মাস ছয় যেতে না যেতেই সেখানে যেনো স্থান সংকুলান হয় না। আর তাই একটি বাড়ির ছয় তলার নিচ তলার দুই ইউনিট ও আরেকটি দোতলা বাড়ির নিচ তলার পুরোটা নিয়ে রাখতে থাকেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। বর্তমানে মোট ১৬ টি রুমে ৩৫ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন। যাদের মিল্টন ও তার স্ত্রী বাবা-মা বলেই ডাকেন।




মিল্টন ও তার স্ত্রী দু’জনেই পেশায় নার্স। তাদের উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলে বৃদ্ধাশ্রমটি। নার্সিং এজেন্সি নামে একটি এজেন্সি রয়েছে মিল্টনের। যেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সেবা দেয়া হয়। সেখান থেকে মিল্টনের যে আয়, আর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে কর্মরত তার স্ত্রী যে অর্থ পান তাতেই চলে মিল্টনের এই বৃহৎ সংসার। তবে মাঝে মাঝে বাইরে থেকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা এলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রাজধানীর কল্যাণপুরে ২টা বাড়ির ১৬টা রুমে নিয়ে মিল্টনের ‘বৃদ্ধাশ্রম হাউজ’। সেখানে মিল্টনকে প্রতিমাসে গুণতে হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর প্রতিমাসে বৃদ্ধদের জন্য খরচ হয় প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এক এক জনের পেছনেই  ওষুধ বাবদ প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা করে খরচ হয় বলে জানিয়েছেন মিল্টন।

মিল্টন বলেন: আমি ও আমার স্ত্রী যা আয় করি তার পুরোটাই আমরা আমাদের বাবা-মায়ের পেছনে খরচ করি। আমরা কোনো টাকা সঞ্চয় করি না। চার বছরের একটি ছেলে অাছে আমাদের। ওর যখন ছয় মাস বয়স তখন থেকেই আমরা শুরু করি এ কার্যক্রম। অামার এ কাজে আমি অনেক শান্তি পাই। আমি চাই যারা বয়স্ক বাবা-মা কে অবহেলা করে, দেখে না। তারা এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুক।

মিল্টনের এ পরিবারে এখন পর্যন্ত ঠাঁই হয়েছে ৭৬ জন বাবা-মায়ের। এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ১৬ জন। আর বাকিদের তাদের পরিবারের সদস্যরা মিল্টনের ফেসবুক পেজে দেখে সনাক্ত করে নিয়ে গেছেন। মিল্টনের কারণেই অনেক পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে তাদের হারিয়ে যাওয়া বাবা-মাকে খুঁজে পেয়ে।

তবে এখন শুধু মিল্টনই নয় মিল্টনকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের খুঁজে পেতে সহায়তা করেন আশেপাশের মানুষরাও। পুলিশ পথচারী যে যেখানে অসহায় বৃদ্ধদের দেখতে পান তারাই মিল্টনকে জানান। মিল্টন তাদের গিয়ে নিয়ে আসেন। আবার অনেকে নিজেরাও পৌঁছে দিয়ে যান অসহায় বৃদ্ধদের। তবে যারা পৌঁছে দেন তারাও আর পরে খোঁজ না নেয়ায় বেশ আক্ষেপ শোনা যায় মিল্টনের কণ্ঠে।

মিল্টন স্বপ্ন দেখেন এক সময় অনেক বড় হবে তার এই বৃদ্ধাশ্রম হাউজ। শেষ জীবনটা নিজের স্ত্রীকে নিয়ে এই বৃদ্ধাশ্রম হাউজেই কাটাতে চান তিনি।

Watch Videos

পাগলিটা মা হয়েছে, বাবা হয়নি কেউ!

25 Feb | Watch Video

দেশের বৃহত্তম আশ্রম এখন হিমশিমে!

25 Feb | Watch Video

তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম আশ্রম! এগিয়ে আসুন সবাই

25 Feb | Watch Video

তৈরি হচ্ছে ৭০০ মানুষের আশ্রয় কেন্দ্র! || Child & Old Age Care.

25 Feb | Watch Video

৭০ হাজার মানুষেরে পাশে দাঁড়িয়েছে Child & Old Age Care.

25 Feb | Watch Video

Most Read
Watch Featured Videos

© Child And Old Age Care 2015-2025
Creating Document, Do not close this window...